হযরত মখদুম শাহদৌলা (রহ.) ছিলেন একজন প্রখ্যাত ধর্মপ্রচারক এবং আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব যিনি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে অবস্থান করেন। তাঁর মাজারটি ইসলাম প্রচারের ইতিহাসের একটি স্মারক হিসেবে পরিগণিত। এই মাজার ও দরগাহ শাহী মসজিদের পাশে অবস্থিত এবং প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বও বহন করে।

অবস্থান

হযরত মখদুম শাহদৌলার মাজার সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় অবস্থিত। এটি বগুড়া-নগরবাড়ি পাকা সড়ক থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পূর্বে হুরাসাগর নদীর তীরে অবস্থিত।

মাজারের বিবরণ

মখদুম শাহদৌলার সমাধিটি একটি প্রাচীন গোলাকার স্থাপত্যকক্ষে অবস্থিত, যার উপর একটি বৃহৎ গম্বুজ রয়েছে। এই মাজারের পাশে বহু শহীদের কবর রয়েছে, যা "গঞ্জে শহীদান" নামে পরিচিত।

কিংবদন্তি ও ইসলাম প্রচার

জনশ্রুতি অনুসারে, মখদুম শাহদৌলা ইয়েমেনের এক রাজা মুয়াজ বিন জাবলের সন্তান। ধর্মপ্রচার এবং আধ্যাত্মিক সাধনার উদ্দেশ্যে তিনি বাংলা অঞ্চলে আগমন করেন। এখানে তিনি রাজা বিক্রম কেশরীর অধীনে থাকা এলাকায় ইসলাম প্রচার শুরু করেন। রাজা তার বিরুদ্ধে একাধিকবার যুদ্ধ করেন। শেষ যুদ্ধে মখদুম শাহদৌলা শহীদ হন।

শাহাদতের পর তার কাটা মাথা থেকেও "সুবহান আল্লাহ" ধ্বনি শোনা যায় বলে কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। এই অলৌকিক ঘটনা দেখে বহু মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেন। শাহদৌলার অনুসারীরা শাহাদতের পরেও ইসলাম প্রচার অব্যাহত রাখেন এবং এই অঞ্চলে ইসলামের বিস্তৃতির জন্য নিরলস কাজ করেন।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব

• মসজিদ ও মাজারে মুঘলপূর্ব স্থাপত্যের নিদর্শন দেখা যায়।
• এখানে শাহ ইউসুফ এবং মখদুম শাহদৌলার অন্যান্য অনুসারীদের সমাধিও রয়েছে।
• "সতীবিবির ঘাট" নামক একটি স্থান রয়েছে, যা মখদুম শাহের বোনের আত্মত্যাগের স্মৃতি বহন করে।

ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রভাব

মখদুম শাহদৌলার আধ্যাত্মিক শক্তি এবং তাঁর শহীদত্ব সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে ইসলামের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাঁর নামানুসারে এই স্থানটি "শাহজাদপুর" নামে পরিচিত হয়। তাঁর অনুসারীদের প্রচেষ্টায় এই অঞ্চল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে ওঠে।

এই মাজার এখনো বহু ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে একটি তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচিত।